ম্যালওয়্যার, ভাইরাস, ট্রোজান, ওয়র্মস ইত্যাদি নাম গুলো আপনারা যারা ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার ব্যবহার করেন তারা অবশ্যই শুনে থাকবেন। এখন এই সব কি জিনিস? এসব খায় নাকি মাথায় দেয়? এসকল বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্ট লিখতে চলেছি। আশা করছি আপনাদের ভাল লাগবে।
ম্যালওয়্যার কি
Malware শব্দটি গঠিত হয়েছে দুইটি ইংরেজি শব্দের প্রথম অক্ষর গুলো নিয়ে যার পূর্ণরূপ হচ্ছে Malicious Software. Malicious মানে হচ্ছে ক্ষতিকারক, আর সফটওয়্যার মানে অনেক গুলা প্রগ্রামের সমষ্টি। সুতরাং Malware মানে হচ্ছে কিছু software বা program যেগুলো Computer,Mobile, বা Computer based ডিভাইস এ প্রবেশ করে এবং আপনার অনুমতি ছাড়া পুরো কম্পিউটারটিকে অকেজো করে দেয়। এক কথায় বলতে গেলে ম্যালওয়্যার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ সফটওয়্যার বা কম্পিউটার প্রগ্রাম।
ম্যালওয়্যার কম্পিউটারের অন্যান্য সাধারণ সফটওয়্যারের মতোই সচল থাকে।শুধু পার্থক্য হচ্ছে সাধারণ সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারকারীর ইচ্ছামতো পরিচালিত হয়। কিন্তু ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর অজান্তেই কাজ করে। ম্যালওয়্যার থাকলে ফাইল নষ্ট ও চুরির পাশাপাশি কম্পিউটারের স্বাভাবিক কাজেও বাধা দিতে পারে।
ম্যালওয়্যারের প্রকারভেদ
ম্যালওয়্যার এর নির্দিষ্ট কোন প্রকারভেদ নেই। দিনদিন প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং এগুলো কোন না কোন ভাবে আমাদের কম্পিউটারে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন করছে। চলুন এই ভার্চুয়াল মনস্টার গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ভাইরাস
ভাইরাস আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করে কিছু খণ্ডিত এবং নির্দিষ্ট ফাইল সমূহকে অকেজো করে ফেলতে পারে। মনে করুন আপনার কাছে একটি ওয়ার্ড ডকুমেন্ট আছে, এখন যদি সেটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে সেই ডকুমেন্টটি আমি আর ওপেন করতে পারবেন না কিংবা ফাইলটি পুরোপুরি ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা জাঙ্ক এ রূপান্তরিত হতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে যে ভাইরাস আপনার পুরো ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যারকেই অকেজো করে ফেলতে পারে। এই অবস্থায় আপনি যদি কোন ফাইল কপি করেন বা কারো সাথে শেয়ার করেন, তবে সেই ভাইরাস আক্রান্ত ফাইল অন্য কম্পিউটারে প্রবেশ করে সেই কম্পিউটারটিকেও অকেজো করে ফেলতে পারে।
কম্পিউটার ওয়ার্ম (Computer Worm)
ওয়র্মস সাধারনত নিজেকে গুন(multiply) করার চেষ্টা করে। এর মানে আপনার কম্পিউটারটি যদি ওয়র্মস দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে এটি আপনার কম্পিউটারে একই নামের অনেক ফাইলস তৈরি করবে এবং আপনার সিস্টেমকে স্লো করে দেবে। এবং আপনার কম্পিউটার থেকে যদি আরেকটি কম্পিউটারে কিছু কপি করেন তবে এটি সেই কম্পিউটারকেও আক্রান্ত করবে। এবং একই ভাবে হাজার হাজার একই ফাইল একই নামের ফোল্ডার বারবার তৈরি করে আপনার সিস্টেমকে স্লো করে ফেলবে। স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজে তালগোল লাগানোই এদের কাজ। হালের লাভগেট, এফ, আই লাভ ইউ ইত্যাদি ওয়ার্মের উদাহরণ।
ট্রোজান হর্স ( Trojans Horse )
নামের সাথে ‘ঘোড়া’ থাকলেও নিজে না ছুটে এরা বরং যে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে জায়গা করে নেয় তার মালিককেই হয়রানির একশেষ করে দেয়। ট্রোজানের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে এটা হার্ড ডিস্ক ফরম্যাট করে দিতে পারে, মানে চিরতরে মুছে যাবে আপনার সব ছবি, ডাটা বা ফাইল।
ট্রোজান সবচেয়ে চালাক প্রকৃতির একধরনের ম্যালওয়্যার। কারন এটি ছদ্মবেশে আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। আপনার হয়তো মনে হতে পারে এটি একটি আসল সফটওয়্যার কিন্তু ট্রোজান আপনার কম্পিউটারে প্রবেশের মাধ্যমে আপনার সিস্টেমের ক্ষতি সাধন করে। অনেকটা সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হওয়ার মত। উদাহরণ স্বরূপ অনেক মেমোরি ক্লিনার দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলোতে ক্লিক করার পর মনে হয় যে আপনার মেমোরি বুঝি ক্লিন হয়ে গেলো । কিন্তু আসলে মেমোরি আরও জ্যাম হয়ে যায়। তাছাড়াও বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস, স্পীড বুস্টার এর রুপেও ট্রোজানকে দেখতে পাওয়া যায়। আপনার মনে হবে যে আপনার মেমোরি ক্লিন করবে বা কম্পিউটারের স্পীড বুস্ট হবে। কিন্তু একবার এই জিনিস আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করার পরে এটি তার আসল রুপ দেখাবে, এবং আপনার সিস্টেম স্লো করতে আরম্ভ করবে এবং শুধু আপনার কম্পিউটারের স্পীড স্লো করেই এর পেটের ভাত হজম হবে না বরং আপনার কম্পিউটারে বিভিন্ন ভাইরাস, ওয়র্মস, ম্যালওয়্যার প্রবেশের জন্য রাস্তা তৈরি করে দেবে।
বুট সেক্টর (Boot Sector)
বুট সেক্টর নামটি এসেছে এমএস-ডস থেকে যা আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমগুলিতে মাস্টার বুট রেকর্ড নামে পরিচিত (পার্টিশন করা ডিভাইসের প্রথম ভাগ)। বুট সেক্টর এসেছিল ফ্লপি’র যুগে, যখন এই চারকোণা ডিস্ক ব্যবহার করা হতো কম্পিউটার বুট করতে। পরে অবশ্য কম্পিউটারের ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ম্যালওয়্যার ছড়ানোর পদ্ধতিতেও আমূল পরিবর্তন এলেও এখনো হঠাৎ হঠাৎ শোনা যায় ফ্লপি ডিস্কের ম্যালওয়্যারের কথা।
অ্যাডওয়্যার (Adware)
আপনি হয়তো কম্পিউটারে বা স্মার্টফোনে কোনো একটি গান, ছবি কিংবা ভিডিও খুঁজতে ইন্টারনেটে ঢুকলেন। গুগল করে খুঁজেও পেলেন সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি। কিন্তু ক্লিক করা মাত্র আপনার ব্রাউজার সেখানে না গিয়ে আপনাকে নিয়ে গেল অন্য আরেকটি সাইটে যেখানে দেখলেন কোনো একটি বিশেষ পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন। এই ধরণের ম্যালওয়্যারকেই বলা হয় অ্যাডওয়্যার । আপাতদৃষ্টিতে খুব নিরীহ আর ভদ্রগোছের বলে মনে হলেও শুধু ওই বিশেষ বিজ্ঞাপনটি আপনাকে দেখানোই কিন্তু এই ম্যালওয়্যারের মূল উদ্দেশ্য নয়। এরপরই মূলত শুরু হয় এদের মিশন! আপনি চান বা না চান, মোবাইলে এমবি থাকুক বা না থাকুক (প্রয়োজনে মূল একাউন্ট থেকে টাকা কেটে হলেও), ম্যালওয়্যার এবার আপনার ডিভাইসে ডাউনলোড করে নেবে বেনামী সব প্রোগ্রাম যেগুলো বয়ে আনে সত্যিকার সব রিস্ক ফ্যাক্টর। এছাড়াও, অ্যাডওয়্যার নিজ থেকে আপনার ব্রাউজারে জুড়ে দেয় অখ্যাত (-_-) সার্চ ইঞ্জিনের টুলবার – আর, এসব স্লো করে দেয় আপনার ইন্টারনেট সার্ফিং।
স্পাইওয়্যার (Spyware)
স্পাইওয়্যার হলাে এক ধরনের ম্যালওয়্যার যা কম্পিউটারে ইন্সটল হয়ে ব্যবহারকারীর অজান্তে তার বিভিন্ন ধরনের তথ্যসমূহ সংগ্রহ করে থাকে। সাধারণত স্পাইওয়্যার ব্যবহারকারীর কাছ থেকে লুকিয়ে থাকে। ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত কম্পিউটারে স্পাইওয়্যার গােপনে ইন্সটল হয়ে যায়। স্পাইওয়্যারগুলাে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারে। এমনকি আপনার ক্রেডিট কার্ড এর উপরেও হস্তক্ষেপ করে। যেমন- বাড়তি কিছু সফটওয়্যার ইন্সটল করে দেয়া এবং ওয়েব ব্রাউজারের কার্যক্রমকে রিডাইরেক্ট করে দেয়া ইত্যাদি।
ক্রাইমওয়্যার (Crimeware)
ক্রাইমওয়্যার হলো এক ধরনের ম্যালওয়্যার যেগুলাে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাইবার অপরাধ সংঘটিত করার উদ্দেশ্যে ডিজাইন করা হয়ে থাকে। কম্পিউটার ব্যবহারকারীর আর্থিক নানা তথ্যাদি যেমন বিভিন্ন বাণিজ্যিক সেবা প্রদানকারী কোম্পানির কোনাে সেবাগ্রহীতার অনলাইন অ্যাকাউন্টের অর্থসংক্রান্ত বিষয়গুলাের স্পর্শকাতর তথ্যাদি (ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড) সংগ্রহ করে অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত অপরাধ সংঘঠিত করার জন্য ক্রাইমওয়্যারগুলাে কাজ করে থাকে।ব্যবহারকারীর অনুমােদন ছাড়াই তার অ্যাকাউন্টের অর্থ সরিয়ে ফেলার জন্য অপরাধীচক্র ক্রাইমওয়্যারকে নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
র্যানসমওয়্যার(Ransomware)
একটু ভিন্ন ভাবে কাজ করে। এটি আপনার পিসির গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোকে কিংবা সমগ্র পিসিকে বাইরে থেকে লক করে ফেলে(এনক্রিপ্টেড )। এগুলো সাধারণত মেইলের এটাচমেন্ট হিসেবে আসে এবং বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার দেয়। যেমন আপনি লটারিতে এক লাখ টাকা জিতেছেন, সারাজীবন ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করুন, অমুক নায়িকার অশ্লীল ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন ইত্যাদি।ফলে যখনই আপনি এসব লিংকে ক্লিক করেন সাথে সাথে আপনি র্যানসমওয়্যার অ্যাটাকের শিকার হন এবং আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো আনলক করার জন্য আপনার কাছ থেকে অর্থ দাবি করে।হ্যাকাররা সাধারণত বিটকয়েন অথবা ইউক্যাশ এর মাধ্যমে মুক্তিপণ নিয়ে থাকেন যার ফলে তাদেরকে ট্রেস করা সম্ভব হয়ে উঠে না এবং তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তাই কোনো আননোন লিংক অথবা অ্যাটাচমেন্ট এ ক্লিক করার আগে দুইবার ভেবে তারপর ক্লিক করবেন ।
আজ এ পর্যন্তই । পরবর্তী পর্বের জন্য স্বাগতম ।
ভাল থাকবেন , ভাল রাখবেন । 😀
Helpful post
ReplyDeleteThanks For Your FeedBack
Delete